ইয়ু কুয়াং ইউয়ে, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: ৫০ বছর আগে তিব্বতে চালানো গণতান্ত্রিক সংস্কারকে স্মরণের জন্য এ বছরের জানুয়ারী মাসে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের গণ কংগ্রেস প্রতি বছরের ২৮ মার্চকে 'তিব্বতের লাখ লাখ কৃতদাসের মুক্তি দিবস' নির্ধারণের প্রস্তাব অনুমোদন করে। ২৮ মার্চ শনিবার সকালে প্রথম 'তিব্বতের লাখ লাখ কৃতদাসের মুক্তি দিবস' উদযাপনী সভা লাসায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের চীনের কমিউনিস্ট পার্টি কমিটির সম্পাদক চাং ছিং লি বলেছেন, গত ৫০ বছরে তিব্বতে আকাশ পাতাল পরিবর্তন হয়েছে। জনগণ সুখী জীবনযাপন করতে পারছেন। ভবিষ্যতে তিব্বতের অর্থনীতির উল্লম্ফন উন্নয়ন অব্যাহতভাবে ত্বরান্বিত হবে। ২০২০ সালের মধ্যে তিব্বতের সার্বিক সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়িত হবে।
তিব্বতের বিভিন্ন জাতির বিভিন্ন মহলের ১৩ হাজার প্রতিনিধি উদযাপনী সভায় উপস্থিত ছিলেন। লাখ লাখ মুক্তি পাওয়া কৃতদাসের প্রতিনিধি হিসেবে ৬৯ বছর বয়সী সোন্দ্রে সভায় অতীতে তার নিজের দুঃখজনক জীবনের কথা স্মরণ করে বলেছেন, 'পুরনো তিব্বতে আমার মতো অসংখ্য কৃতদাস বংশপরম্পরায় মালিকদের নিষ্ঠুর শোষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলো। আমরা ভিজে ও স্যাতসেতে নোংরা ছোট্ট ঘরে, এমন কি গো শালা ও অশ্বশালায় থাকতাম। বিভিন্ন মন্দির বা অভিজাত সম্প্রদায়ের বাসায় তারা ইচ্ছে মত নিজস্ব আদালত প্রতিষ্ঠা করতো। তারা বর্বরোচিতভাবে নিপীড়নের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কৃতদাসদের চোখ, জিহবা বা হাত পা কেটে ফেলতো।'
তখন তিব্বতের মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশেরও কম কৃতদাসদের মালিক তিব্বতের উত্পাদিত সম্পদের সবটাই দখল করে নিত। কিন্তু মোট জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশেরও বেশি কৃতদাস ছিলো সমাজের সবনিম্ন স্তরের মানুষ। তাদের হাতে উত্পাদিত সম্পদের কানাকড়িত থাকতো না। স্বাধীনতা ছিল না। ছিল না এতটুকু প্রাণের নিশ্চয়তাও।
১৯৫১ সালে চীনের কেন্দ্রীয় গণ সরকার তিব্বতের স্থানীয় সরকারের সঙ্গে 'শান্তিপূর্ণ উপায়ে তিব্বতকে মুক্তি করা সংক্রান্ত চুক্তি' স্বাক্ষর করলে তিব্বতের শান্তিপূর্ণ মুক্তি বাস্তবায়িত হয়। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদের সমর্থনে ১৯৫৯ সালে তিব্বতের উর্ধতন শাসক গোষ্ঠী প্রকাশ্যে চুক্তিটি ছিঁড়ে ফেলে সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘোষণা করে। কেন্দ্রীয় সরকার তার সঙ্গে বিদ্রোহ দমন করার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক সংস্কারের আন্দোলন চালু করে এবং আমূলভাবে রাজনীতি ও ধর্মের সমন্বয়ে সামন্ততান্ত্রিক কৃতদাস প্রথা উচ্ছেদ করে। ২৮ মার্চ হচ্ছে গণতান্ত্রিক সংস্কারের শুরুর তারিখ।
গণতান্ত্রিক সংস্কারের কারণে লাখ লাখ কৃতদাস মুক্তি পেয়ে নতুন জীবন লাভ করেছেন। তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পার্টি কমিটির সম্পাদক চাং ছিং লি বলেছেন, 'সামন্ততান্ত্রিক কৃতদাস প্রথাকে সম্পূর্ণরূপে কবর দেয়া এবং তিব্বতের লাখ লাখ কৃতদাসদের পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া হচ্ছে বিশ্বের কৃতদাস প্রথা বাতিল আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ব্রতের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এবং গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও মানবাধিকার ক্ষেত্রে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ও চীনা জনগণের সৃষ্ট মহান অবদান। তিব্বতের উন্নয়নের ইতিহাসে, চীনের আধুনিক ইতিহাসে ও মানবজাতির সামাজিক উন্নয়নের ইতিহাসে এর যুগান্তকারী তাত্পর্য রয়েছে।'
আগের কৃতদাস সোন্দ্রে বলেছেন, '৫০ বছরে আমাদের স্বদেশের আকাশ পাতাল পরিবর্তন ঘটেছে। জনসাধারণের জীবন দিনে দিনে সমৃদ্ধি হয়ে যাচ্ছে। এখন সড়কপথ আমাদের বাড়ির সামনে নির্মিত হয়েছে। টেলিভিশন ও টেলিফোন আমাদের বাসায় প্রবেশ করেছে। শিশুরা স্কুলে ভর্তি হয়েছে। প্রতিটি পরিবার নতুন বাড়ি নির্মাণ করেছে এবং ব্যাংকে তাদের নিজের আমানত রয়েছে।' ২০০৮ সালে তিব্বতের জিডিপি প্রায় ৩৯.৬ বিলিয়ন ইউয়ান রেনমিনপি। ১৯৫৯ সালের তুলনায় তা ৬৫ গুণ বেড়েছে। জীবন ও চিকিত্সার মান উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় জনসাধারণের গড়পরতা আয়ু অতীতের ৩৬ বছর থেকে বেড়ে এখন ৬৭ বছর হয়েছে। তিব্বতের সংস্কৃতিও যথাযথভাবে সংরক্ষিত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করে পোতালা প্রাসাদসহ নানা সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের মেরামত ও রক্ষা করেছে। তিব্বতী বিদ্যার ওপর গবেষণা কাজও অভূতপূর্ব বিকশিত হয়েছে।
উদযাপনী সভায় তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পার্টি কমিটির সম্পাদক চাং ছিং লি বলেছেন, তিব্বতের ভবিষ্যত মুখী আরো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তা হলো ২০২০ সালের মধ্যে সার্বিক সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলা। চীনের শততম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সময় তিব্বতে মোটামোটি আধুনিকায়ন বাস্তবায়িত হবে। চাং ছিং লি আরো বলেছেন, দালাই গোষ্ঠীর সঙ্গে সংগ্রাম জাতিগত সমস্যা নয়, ধর্মীয় সমস্যা নয় বা মানবাধিকার সমস্যাও নয়। এটা হলো দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভূভাগের অখন্ডতা রক্ষা করার সংগ্রাম। বিভিন্ন জাতির জনগণের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরণের বিচ্ছিন্নদাবাদী তত্পরতা রোধ করতে হবে এবং তার ওপর আঘাত হানতে হবে এবং দেশের নিরাপত্তা ও তিব্বতের স্থিতিশীলতাকে রক্ষা করতে হবে।